ইমাম খাইর, সিবিএন:
দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৪ বছর পর অবৈধ দখলমুক্ত হলো কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা দিয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য। এসেছে স্বস্তি। ফিরেছে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ। দখলদার ও দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এবার সগৌরবে এগিয়ে যাবে কক্সবাজারবাসীর স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানটি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ লায়ন মোঃ মুজিবুর রহমান বলেন, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দীন আহমদ, ভিসি ড. গোলাম কিবরিয়া ও আ. ক.ম গিয়াস উদ্দীন মিলে একটি দখলবাজচক্র অবৈধভাবে ক্যাম্পাস দখল করে রাখে। প্রায় সাড়ে চার বছর তাদের হাতে জিম্মি ছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। চোখের সামনে দুর্নীতির মহোৎসব চললেও প্রতিবাদের সাহস পায়নি কেউ। সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ। তাদের কারণে অনেক স্বনামধন্য শিক্ষককে হারাতে হয়েছে। এখন সরকারের পালা বদলের সাথে সাথে দখলদার, দুর্নীতিবাজরাও পালিয়েছে।  সুযোগ পেয়ে এবার সবাই মুখ খুলতে শুরু করেছে। বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল। এবার সব প্রকাশ হবে। নেওয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা।

মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় খোলামেলা এসব কথা বলেছেন লায়ন মোঃ মুজিবুর রহমান।

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষায় কক্সবাজারকে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন থেকে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর প্রথম ৭ বছরের রেকর্ড খুবই চমকপ্রদ ছিল। মাঝপথে এসে ২০২০ সালে একটি অবৈধ দখলবাজচক্র কক্সবাজারবাসীর এ সম্পদকে লুটেপুটে খাওয়ার মিশনে নামে। আওয়ামী লীগ নেতা সালাহউদ্দীন আহমদ সিআইপি প্রকাশ মাছ সালাহ উদ্দীন এর নেতৃত্বে একটি দখলদার গোষ্ঠী বেআইনিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃত্ব হাতে নিয়ে শিক্ষার পরিবেশকে ধ্বংস করে দেয়। স্বৈরাচারী কায়দায় দখল করে বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনৈতিক দলের অফিস বানিয়ে ফেলে। যে কারণে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাদের প্রাণের ক্যাম্পাস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। অনেক দক্ষ ও যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক চলে যায়। ইতোমধ্যে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। এমন সময় ভুক্তভোগী শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারিদের আহ্বানে আমি প্রতিষ্ঠানের হাল ধরি।

লায়ন মোঃ মুজিবুর রহমান দুঃখ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য ইউজিসির সুষ্পষ্ট নীতিমালা থাকলেও তার কোন তোয়াক্কা করেনি সালাহউদ্দীন সিন্ডিকেট। ইচ্ছে মত নিয়োগ দিয়েছে। ছাঁটাই করেছে। নামে বেনামে বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা তছরুফ করেছে। রাজনৈতিক স্বার্থ হাছিলের জন্য প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করেছে। অহরহ অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ যায় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ইউজিসির কাছে। যেসবের তদন্তে আসে একাধিক টিম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস তুলে ধরে মোঃ মুজিবুর রহমান বলেন, আমি পর্যটন নগরী খ্যাত কক্সবাজার তথা দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র প্রতিষ্ঠাতা ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সেক্রেটারি। গত ২ জুুন ২০২০ আমার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দায়েরের মধ্য দিয়ে ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সালাহউদ্দীন আহমদ বৈশ্বিক মহামারিজনিত লকডাউন চলাকালে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে অন্যায়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব কায়েম করেন। এরপর তিনি ট্রাস্টকে পাশ কাটিয়ে নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা দাবি করে অনেক শিক্ষক-কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য শুরু করেন। বিগত ১৫/০৯/২০১৩ ইং তারিখ শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক এবং ৬/১০/২০১৩ ইং তারিখ ইউজিসি কর্তৃক আমার নামে বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের চিঠি প্রাপ্ত হই। পরবর্তীতে দীর্ঘ ৭ বছর যাবত শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসি থেকে আমার বরাবরে প্রতিষ্ঠাতা/উদ্যোক্তা সম্বোধন করে বিভিন্ন সময়ে পত্র আদান-প্রদান হয়। অপরদিকে খোদ সালাহ উদ্দীনও দীর্ঘ ৭ বছর যাবত আমাকে প্রতিষ্ঠাতা/উদ্যোক্তা সম্বোধন করে বিওটির সভা এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছেন, যা সকলে অবগত আছেন।

ধ্বংসের খাদের কিনার থেকে উঠে আসা বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে দল-মত নির্বিশেষে সবার সহযোগিতা ও পরামর্শ কামনা করেছেন প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান লায়ন মোঃ মুজিবুর রহমান।

মতবিনিময় সভায় কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দীন বাহারী, সহ-সভাপতি জিএএম আশেক উল্লাহ, সিনিয়র সাংবাদিক কামাল হোসেন আজাদ, শামসুল হক শারেক, ইকরাম চৌধুরী টিপুসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।